সাইবার-বুলিং :
অনলাইনে বুলিং করাই সাইবার বুলিং। যদি কেউ অনলাইনে কারো সাথে বাজে আচরণ করে কিংবা উত্যক্ত করে তবে সেটা সাইবার বুলিং।
সাইবার বুলিং অনলাইনে বিদ্রুপ করার চেয়ে একটু আলাদা যদিও দু’টো শব্দই প্রায় একই অর্থে ব্যবহার করা যায়।
সাইবার বুলিং সাধারণত পরিচিতরাই করে থাকে। এটা অনেকটা অফলাইনে কাউকে হেয় করার মতোই।
সাধারণত অপরিচিত মানুষরাই বিদ্রুপমূলক মন্তব্য কিংবা বার্তা পাঠিয়ে থাকে। যাদের সাথে কখনও দেখা হয়নি তাদেরকে উত্যক্ত করতে বা তাদের সাথে বিতর্কে জড়াতে এটা করা হয়।
কিছু প্রয়োজনীয় পরামর্শ :
তোমার সাথে না ঘটলেও তুমি বিশ্বস্ত কারো সাথে সাইবার বুলিং নিয়ে কথা বলো, যারা তোমার চেয়ে বড়। তোমার বন্ধু যে কিনা সাইবার বুলিং নিয়ে ভীত অথবা মর্মাহত তার হয়ে নির্ভরযোগ্য বড় কারো সাথে কথা বলো।
অনলাইনে সাইবার বুলি হলে তা ব্লক ও রিপোর্ট করতে বড় কারও সাহায্য নাও।
উত্যক্ত করতে চায় এমন কোনো বার্তার কোনো উত্তর দিও না। রিপোর্ট করো ও বড়োদের সাহায্য নাও।
অশোভন বার্তা মুছে ফেলতে চাইলেও, নির্ভরযোগ্য অভিভাবককে দেখাও এবং প্রমাণ হিসেবে রেখে দাও।
ক্যাটফিশিং :
ডিজিটাল বিশ্বে, ক্যাটফিশ হচ্ছে তারা, যারা নিজেদের পরিচয় লুকিয়ে অন্যদের পরিচয় ধারণ করে, যেটা তারা নয়।
উদাহরণস্বরূপ, বানোয়াট সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল তৈরি করা খুব একটা কঠিন নয়। একটি নাম দিয়ে ও অন্য কারো ছবি আপলোড করে এটা করা যায়। অনলাইনে অন্য কারো পরিচয় দিয়ে ক্ষতিকর ও ঘৃণামূলক বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য সাধারণত এটা করা হয়।
তুমি চেনো না এমন কেউ যদি তোমাকে অনলাইনে বন্ধু বানাতে চায় কিংবা কোনো বার্তা দেয় তবে, সতর্ক হও যে তারা যে নাম ও ছবি ব্যবহার করছে সেটা আসল কিনা।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে, এ ধরনের ক্যাটফিশ আকর্ষণীয় ছবি ব্যবহারের মাধ্যমে অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করে যাতে অন্যরা তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহণ করে।
ছদ্মনাম :
কিছু কিছু অ্যাপে এই ফিচার ব্যবহার করা যায়। মানুষ প্রাপককে না জানিয়ে ও নিজের পরিচয় গোপন করে বার্তা পাঠাতে কিংবা মন্তব্য করতে মেসেজিং অ্যাপে ছদ্মনাম ব্যবহার করে। আবার কিছু অ্যাপ এমনভাবে তৈরি যাতে গ্রহীতা বার্তার কোনো প্রত্যুত্তর দিতে পারে না।
এক্ষেত্রে, ঝুঁকিগুলো কি কি ?
ছদ্মনাম ব্যবহার কিংবা পরিচয় গোপন করা অন্যদের প্রতি কঠোর হওয়ার বিষয়টিকে অনেক সহজ করে দেয়। এটা কিছু মানুষকে অন্য মানুষ হিসেবে পরিচিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। এটা ক্যাটফিশিং নামেও পরিচিত। ছদ্মনাম ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে এমন কোনো সেবা ব্যবহারের পূর্বে নিশ্চিত হয়ে নাও যে কিভাবে ক্ষতিকর ব্যবহারকারীদের রিপোর্ট বা অভিযোগ এবং ব্লক করতে হয়।
ট্রলিং :
বাস্তব জীবনের মতই কিছু মানুষ আছে যারা অনলাইনে অশোভন আচরণ করে। অনলাইনে নোংরা মেসেজ পাঠানো খুব সহজ এবং তা অজ্ঞাত পরিচয়ে পাঠানো যায়। যারা এধরনের মেসেজ পাঠায় তাদের বলা হয় ‘ইন্টারনেট ট্রলস’। অন্যকে কষ্ট দেয়া বা প্ররোচিত করার লক্ষ্যে অশোভন ও কুরুচিপূর্ণ লেখাকে ট্রলিং বলা হয়।
অন্যকে রাগিয়ে দেয়ার জন্য বা কষ্ট দেয়ার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে আক্রমনাত্মক, নোংরা মেসেজ বা কমেন্ট লেখাকে বলা হয় ইন্টারনেট ট্রলিং।
ইন্টারনেট ট্রলিং প্রায়শই সুপরিচিত কোন ব্যক্তিকে নিয়ে করা হয় যাকে হয়তো মন্তব্যকারী কখনোই দেখেনি বা পরিচিত হয়নি। শুধুমাত্র তার সাথে অযথা তর্কে জড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টিই যেখানে থাকে উদ্দেশ্য এবং তা করা হয় একটি ভুয়া পরিচয়ের মাধ্যমে।
এক্ষেত্রে সেই কূটতর্কে না জড়িয়ে পড়া বা পালটা উত্তর না দেয়াটাই সমীচিন কেননা তা করলে অপর পক্ষের উদ্দেশ্যই পূরণ করা হবে। এ পরিস্থিতিতে তাদেরকে ব্লক করে রিপোর্ট করে দেয়াটাই করনীয়। বয়সে বড় কাউকে তা জানানো দরকার যাতে সে সাহায্য করতে পারে।
যদি তুমি একটি কদর্য মেসেজ পেয়ে থাকো, তবে মর্মাহত এবং রেগে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। হয়তো তোমার পাল্টা উত্তর দেয়ার ইচ্ছে হতে পারে। এতে পরিস্থিতি ভালোর চেয়ে খারাপই হবে কেননা তোমার উত্তর পাওয়া বা বিতর্কে জড়ানোই প্রেরকের উদ্দেশ্য।
এ ব্যাপারে তোমার করনীয় কি ?
বয়সে বড় কারো কাউকে সাহায্যের জন্য বলো
প্রেরককে ব্লক করো ও তার বিরুদ্ধে ওয়েবসাইট বা অ্যাপের নিরাপত্তা পদ্ধতি অনুযায়ী রিপোর্ট করো
প্রমান হিসেবে তার পাঠানো মেসেজের কপি না রেখে তা ডিলেট করবে না
এনক্রিপশন :
অননুমোদিত অনুপ্রবেশ প্রতিরোধে এনক্রিপশন হচ্ছে এমন এক প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো তথ্য বা ডাটা কোডে রূপান্তর করা যাবে। এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপ্ট করা বার্তা শুধুমাত্র প্রেরক ও গ্রাহক পড়তে পারবে। এটা ভালোও হতে পারে, মন্দও হতে পারে।
ভালোদিক হচ্ছে, কোনো বার্তা এনক্রিট করা হলে তা সুরক্ষিত ও ব্যক্তিগত থাকবে। এটা গুরুত্বপূর্ণ ও সংবেদনশীল তথ্য আদান প্রদানের ব্যাপারে খুবই উপকারী।
খারাপ দিক হচ্ছে, কিছু মানুষ এর সুবিধা নিয়ে এবং এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন ব্যবহার করে ক্ষতিকর তথ্য ছড়িয়ে দিতে পারে যা মডারেট বা পরিবর্তন করা ও সনাক্ত করা যায় না।
ডিজিটাল-ফুটপ্রিন্ট :
ইন্টারনেট ব্যবহারের সময় তুমি কি কি করছো তাই হচ্ছে তোমার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। অনলাইনে তোমার সম্মান ও গ্রহণযোগ্যতা অনেকটাই এর উপর নির্ভরশীল।
তোমার ডিজিটাল ফুটপ্রিন্টের মধ্যে রয়েছে- তুমি যেসব কন্টেন্ট তৈরি, পোস্ট ও শেয়ার কর (এটা তোমাকে নিয়ে পোস্ট ও তোমার শেয়ার করা অন্যদের পোস্টও হতে পারে)। তুমি অনলাইনে কি শেয়ার করছ, লাইক দিচ্ছ কিংবা পোস্ট করছ তা তোমার ইতিবাচক ডিজিটাল তৈরির ফুটপ্রিন্টের ক্ষেত্রে অত্যন্ত জরুরি।
তুমি অনলাইনে নেতিবাচক এমন কিছু করছো না তো, যা তোমার সুনাম নষ্ট করতে পারে, সে ব্যাপারটি নিশ্চিৎ কর। উদাহরণস্বরূপ, তোমার নিজের নাম অনলাইনে সার্চ করার পর যদি হাস্যকর বা অনুপযোগী কোনো ছবি চলে আসে যা পাবলিকলি শেয়ার করা হয়েছে, সেক্ষেত্রে তোমার শিক্ষক বা ভবিষ্যৎ চাকরিদাতার সেটা দেখতে পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।