মুখবন্ধ :
পদার্থবিজ্ঞানের সবচেয়ে মেধাবী এবং জনপ্রিয় শিক্ষক রিচার্ড ফাইনম্যান। বেশ চটকদার আর ক্লাউন স্বভাবের লোক ছিলেন তিনি।
রিচার্ড ফাইনম্যান বলেছেন,"যদি কোন প্রলংকারী ঘূর্ণিঝড় এসে সকল তথ্য ধ্বংস করে দিয়ে যায় এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছে শুধুমাত্র একটি বার্তা পৌঁছানোর থাকে তাহলে কোন বার্তাটি সবচেয়ে কম সময়ে অধিক তথ্য পৌঁছিয়ে দিতে পারবে জানেন? উত্তর হলো সকল পদার্থ পরমাণু দিয়ে তৈরি- এরা এমন এক ক্ষুদ্র কণা যারা অবিরাম ছোটাছুটি করে, একটুখানি দূরে থাকলে পরস্পরকে আকর্ষণ করে এবং ছোঁয়া পেলে একে অন্যকে বিকর্ষণ করতে শুরু করে।"
এত কম শব্দ খরচ করেও এত তথ্য থাকতে পারে তার প্রমাণ এই বাক্য।
পদার্থকে জুম করা:
ধরুন আপনি চেয়ারে বসে আছেন এবং আপনার সামনে টেবিলে একফোঁটা পানি পড়ে আছে এবং আপনার কাছে একটি শক্তিশালী ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্র আছে। তাহলে আপনার প্রথমেই ইচ্ছা করবে পানির ফোঁটাটিকে জুম করা। দেখতে ইচ্ছা করবে কি আছে তার গহীন কেন্দ্রে।
আমরা যদি পানির ফোঁটাটিকে দুই হাজার গুন বিবর্ধিত করি তাহলে খুব একটা বেশি কিছু চোখে পড়বে না। পানির আমরা সমতল পৃষ্ঠয়ই দেখতে পাবো।
তবে সেখানে ফুটবলাকৃতির কিছু বস্তু দেখতে পাবো।ব্যাপারটা বেশ ইন্টারেস্টিং!
এগুলো হচ্ছে ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব প্যারামেসিয়া। আপনার যদি এদের নিয়ে প্রচণ্ড আগ্রহ থাকে তাহলে আপনি এদের কর্ষিকাগুলোকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে পারেন।
আর যদি আপনার এদের ব্যাপারে কোন আগ্রহ না থাকে তাহলে এটিকে আরও ২০০০ গুন বিবর্ধিত করুন। এবার পানির পৃষ্ঠটি আপনার কাছে সমতল মনে হবে না অনেক দূর থেকে ফুটবল মাঠে ভিড় করা দর্শকদের দেখলে যেমন মনে হবে ঠিক তেমনটা। কিছু খাদ দেখতে পাবেন।
পরমাণুর কেন্দ্রে:
এবার হুট করেই পানির ফোঁটা টিকে এক বিলিয়ন গুণ বিবর্তিত করুন।
এবার আপনি দেখতে পাবেন পরমাণু। দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণু একটি অক্সিজেন পরমাণুকে যুগলবন্দী করে সেখানে দোল খাচ্ছে।
এখানেই শেষ নয় এ ছবিকে আরও এক মিলিয়ন গুণ বিবর্ধিত করুন। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে এরকম মাইক্রোস্কোপ আমরা এখনো আবিষ্কার করতে পারিনি কিন্তু ধরুন আপনার কাছে আছে।
তাকালেই দেখবেন যে পরমাণুর গহীনে একটি জমাটবদ্ধ বস্তু রয়েছে আর তার চারপাশে একটি ঘূর্ণায়মান বস্তু তাকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। ঠিক যেন আমাদের সৌরমণ্ডলের মতো।
জমাটবদ্ধ বস্তুটির নাম হলো নিউক্লিয়াস আর তার চারপাশে ঘূর্ণায়মান বস্তুটির নাম ইলেকট্রন। ইলেকট্রনের চার্জ ঋণাত্মক আর নিউক্লিয়াসের চার্জ ধনাত্মক এ কারণে সেখানে তড়িৎচুম্বকীয় বল ক্রিয়া করছে। আর তারা পরস্পরের দ্বারা আকর্ষিত হচ্ছে।
আমি আপনাকে উপদেশ হিসেবে যা বলব তা হচ্ছে ইলেকট্রন নিয়ে আপনার খুব একটা মাথা ঘামানো উচিত নয় কারণ একে আরও বিবর্তিত করে দেখলে আপনি কিছুই পাবেন না। এটি একটি মৌলিক কণা এর আয়তন শূন্য অর্থাৎ ডট পার্টিকেল।
আর ইলেকট্রনকে বিবর্ধিত করে দেখতে গেলে আপনি অদ্ভুত কোয়ান্টাম পরিঘটনার সম্মুখীন হবেন যা দেখতে কেমন হবে আমরা কল্পনাও করতে পারিনা।
ইলেকট্রন একটি ডট পার্টিকেল হওয়ায় একে খুবই একটি নির্দিষ্ট জায়গায় খুঁজে পাওয়া খুবই দুঃসাধ্য ব্যাপার। কারণ এটি আলোর গতির ১০ ভাগের ১ ভাগ গতিতে নিউক্লিয়াসের চারদিকে ঘোরে।
একটা ইলেকট্রন প্রতি সেকেন্ডে যতবার নিউক্লিয়াসের চারিদিকে ঘুরে আসে পৃথিবী এক মিলিয়ন বছরেরও সূর্যের চারিদিকে ততবার ঘুরে আসে না!
এবার নিউক্লিয়াসকে আরো এক মিলিয়ন গুণ বড় করা যাক।
দেখবেন কিছু কণা সবল নিউক্লিয় বলের মাধ্যমে খুব শক্ত বন্ধনের দ্বারা যুক্ত রয়েছে। এই কণাগুলোর প্রায় অর্ধেককে বলা হয় প্রোটন এবং প্রায় অর্ধেককে বলা হয় নিউট্রন। সুতরাং নিউক্লিয়াস হচ্ছে প্রোটন ও নিউট্রনের আবদ্ধ জেলখানা।
দূর থেকে কি কখনো পিঁপড়ার বাসা দেখেছেন? দূর থেকে মনে হবে জায়গাটি সমতল। কাছে গেলে দেখা যাবে এটা খুবই ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাটির বল দ্বারা গঠিত হয়েছে।
প্রোটন এবং নিউট্রনের ভেতরেও কিছু কয়েদি অর্থাৎ আসামি রয়েছে। এদের নাম কোয়ার্ক। এরা প্রোটন এবং নিউট্রনের ভিতরে সব সময় হাঙ্গামা করেই চলেছে।
১৯৬৪ সালে ক্যালটেকের মারে গেল ম্যান ও তার সহকর্মীরা মিলে একটি কোয়ার্ক মডেল স্থাপন করেন। ১৯৬৮ সালে CERN-এ বিজ্ঞানীরা কোয়ার্কের অস্তিত্ব পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করেন।
মানব মন এখানেই থেমে থাকে না। বেশ কয়েক দশক ধরেই বিজ্ঞানীরা নিজেদেরকে প্রশ্ন করছেন কোয়ার্কের মধ্যে কি রয়েছে। সত্তরের দশকে স্ট্রিং থিওরি নামে একটি ধারণা গড়ে উঠেছে।
যেখানে বলা হচ্ছে কোয়ার্ক হচ্ছে সুতার মতো কিছু স্ট্রিং এর নানা রকম ব্যান্ডের কম্পনের ফলে উৎপত্তি হয় আর এর ফলে আমরা পাই প্রোটন, নিউট্রন এবং গড়ে উঠেছে আমাদের এই মহাবিশ্বের সকল পদার্থ।
অর্থাৎ স্ট্রিং মহাবিশ্বের বিল্ডিং ব্লক হিসেবে কাজ করছে হয়তো। স্ট্রিং দিয়ে সকল পদার্থ গঠিত কিনা তা প্রমাণ করা খুবই কঠিন।
কারণ এর ভর বলতে কিছুই নেই তাহলে কিভাবে এদেরকে শনাক্ত করা হবে তার জন্য নতুন কোন পদ্ধতির দরকার।