সুন্দর বনে, বাঘের হরিণ শিকারের ঘটনাটা একবার দেখে আসি ।
বাঘ সাধারণত চুপিসারে কোনো এক জায়গায় লুকিয়ে থেকে হরিণ শিকার করে। আর বাঘকে দেখলেই বানর সহ অন্যান্য পাখি বিভিন্ন আওয়াজ করা শুরু করে দেয় এই আওয়াজ শুনে আশপাশের এলাকায় অবস্থান করা হরিণ ও অন্যান্য প্রানি সতর্ক হয়ে যায় ।
যার ফলশ্রুতিতে বাঘের হরিণ শিকার করা একটু কষ্টকর হয়ে ওঠে। তবে হ্যাঁ, হরিণ যদি কোন পূর্ব সতর্কতা মূলক সংকেত বা শব্দ শুনতে না পায় তাহলে বাঘের হরিণ শিকার করা তুলনামূলক সহজ হয় । এখানে একটি বিশেষ ব্যাপার হলো বিভিন্ন প্রানির দ্বারা উৎপন্ন "সতর্কীকরণ শব্দ " হরিণের জীবন বাঁচাতে অনন্য ভূমিকা রাখছে।
বিভিন্ন প্রানির দ্বারা উৎপন্ন শব্দের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি যে, এটি কোন প্রানি । যেমন ধরুন - কোকিল ও কাক দেখতে অনেকটা একই রকম হলেও তাদের কন্ঠস্বর বা উৎপন্ন শব্দ কিন্তু সম্পূর্ণ আলাদা।
আর এভাবেই প্রতিটি আলাদা প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে উৎপন্ন শব্দের ভিন্নতা লক্ষ্য করা যায় ।
পৃথিবী শব্দের একটা বিচিত্র জগত, মৌ মাছির ডানা থেকে প্লেনের পাখা, গাছ থেকে কোনো ফল মাটিতে পড়া, বৈদ্যুতিক পাখার ঘুর্ণন, গাড়ির ইঞ্জিন, কলম দিয়ে লেখা, মানুষসহ অন্যান্য প্রানির হাটা-চলা, কথা বলা প্রায় সব ক্ষেত্রেই শব্দ উৎপন্ন হয়।
বলা হয়ে থাকে, পৃথিবী ও এর বাইরে অর্থাৎ সৃষ্টি জগতে শক্তির পরিমাণ নির্দিষ্ট বা শক্তি নতুন করে সৃষ্টি বা ধ্বংস করা যায় না , শক্তি শুধু এক রূপ থেকে অন্য এক রূপে রূপান্তরিত হয়। আর একে শক্তির নিত্যতার বা সংরক্ষণশীলতার সূত্র বলে ।
শক্তির সাধারণ রূপ হলো ৯টি , যথা:
১. যান্ত্রিক শক্তি,=(স্থিতি ও গতি শক্তি)
২. তাপ শক্তি ,
৩. রাসায়নিক শক্তি,
৪. শব্দ শক্তি,
৫. আলোক শক্তি,
৬. সৌর শক্তি,
৭. চৌম্বক শক্তি,
৮. পারমাণবিক শক্তি ,
৯. বিদ্যুৎ শক্তি ।
এদের মধ্যে শব্দ হলো একটু বিশেষ ধরনের শক্তি। কারণ শক্তির সাধারণ রূপ গুলোর পারস্পরিক রূপান্তরের প্রায় সব ক্ষেত্রেই শব্দ শক্তি উৎপন্ন হয় । সাধারণভাবে গতি নামক শক্তির কারণেই শব্দ উৎপন্ন হয় । আর গতি যুক্ত প্রায় সব কিছুই একটু হলেও শব্দের সৃষ্টি করে।
শব্দ হলো এমন এক শক্তি যা আমাদের শ্রবন অনুভূতি যোগায় ।
এবার আসি আলোর প্রসঙ্গে,
আলোর তো একটা নির্দিষ্ট গতি আছে,
সেকেন্ডে প্রায় ১ লক্ষ ৮৬ হাজার মাইল বা প্রায় ৩ লক্ষ কিলোমিটার। তাহলে আলোর গতি থাকা সত্ত্বেও আলো চলার সময় কোনো শব্দ উৎপন্ন হয় না কেন ?
আলো চলাচল করে শক্তির প্যাকেট বা কোয়ান্টা আকারে , যাকে বলা হয় কোয়ান্টাম শক্তি। এর অপর নাম হচ্ছে ফোটন, আর এই ফোটন চলাচলের সময় কোনো শব্দ উৎপন্ন হয় না, কারণ ফোটন চলাচলের জন্য কোন মাধ্যমই প্রয়োজন হয় না !!
এখন, আসা যাক হাইপারসনিক প্রসঙ্গে। আমরা হয়তো শুনে থাকবো যে, হাইপারসনিক মিসাইল, হাইপারসনিক বিমান ইত্যাদি শব্দের চেয়েও বেশি গতিতে চলতে পারে। যেমন সম্প্রতি রাশিয়ার তৈরি "কিনঝাল" নামক " হাইপারসনিক মিসাইল " শব্দের চেয়ে ১০ গুন বেশি গতিতে চলতে পারে। সম্প্রতি চীনের তৈরি " স্টারি স্কাই-২" নামক হাইপারসনিক বিমান, শব্দের চেয়ে ৬ গুন বেশি গতিতে ছুটতে পারে।
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় যে, এসব ক্ষেত্রে কি শব্দ উৎপন্ন
হয় না ? হ্যা প্রাথমিকভাবে হাইপারসনিক মিসাইল বা বিমানেও শব্দ উৎপন্ন হয় তবে তা একটা নির্দিষ্ট সময় পর শব্দের আদর্শ গতি 330 m/s কেও ছাড়িয়ে যায়। এর পরেও সেখানে শব্দ উৎপন্ন হয় তবে তা মানুষের শ্রবন সীমার বাইরে ।
এখন একটু পৃথিবীর বাইরে থেকে ঘুরে আসি।
আপনি হয়তো জেনে থাকবেন যে, আলো চলার জন্য নির্দিষ্ট কোনো মাধ্যম প্রয়োজন হয় না তবে শব্দ চলার জন্য নির্দিষ্ট মাধ্যম প্রয়োজন। আর জেনে রাখা ভালো, মাধ্যম ভেদে শব্দের গতিও ভিন্ন ভিন্ন হয় । বিভিন্ন মাধ্যমে শব্দের বেগ:
মাধ্যম বেগ (m/s)
বায়ু 330 m/sলোহা 5130 m/s
হীরা 12,000 m/s
পারদ 1450 m/s
তাহলে পৃথিবীর বাইরে তো বায়ুমণ্ডল নেই। তাহলে কি সেখানে শব্দ উৎপন্ন হয় না।
" না " পৃথিবীর বাইরে বায়ু অথবা অন্য নির্দিষ্ট কোনো মাধ্যম না থাকায় সেখানে শব্দ উৎপন্ন হয় না।
তবে হ্যাঁ, তড়িৎ-চুম্বকীয় শক্তি রূপে " আলো " সেখানে রাজত্ব করে।