অনলাইন সমানুভূতি :
সমানুভূতি হচ্ছে একটি অনুভূতি যা অন্যের উপর তোমার প্রভাব সম্পর্কে তা সতর্ক করে দেয় এবং তোমার কোনো আচরণে তার প্রত্যুত্তর কেমন হবে।
উদাহরণস্বরুপ , কেউ হয়তো বা কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তুমি যদি বোঝো কেনো তার এতো খারাপ লাগছে তবেই তুমি সমানুভূতি জানাতে পারবে, মনে হবে যে তুমি সমানুভূবতা দেখাচ্ছ।
সহানুভূতি এবং সমানুভূতি দেখানো একই বিষয় না। সমানুভূতি হচ্ছে কারো সমস্যায় নিজেকে পুরোপুরি মিশিয়ে ফেলা,
আর অন্যদিকে সহানুভূতি হচ্ছে কারো দুঃসময়ে তার প্রতি যত্নবান হওয়া, এক্ষেত্রে খারাপ সময় পার করা মানুষটির অনুভূতি বোঝা যায় না।
স্ন্যাপচ্যাট বা ইন্সটাগ্রামে যোগাযোগের সময় কিংবা অনলাইনে গেম খেলার সময় বন্ধুদের সঙ্গে কথা বলার সময় অথবা ম্যাসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথনের সময় সমানুভূতিশীল হওয়া বেশ গুরুত্বপূর্ণ।
অন্যের মানসিক অবস্থা পুরোপুরি বুঝে নিয়ে সে অনুযায়ী অনলাইনে তার সঙ্গে কথা বলার বিষয়টি ভালোভাবে মাথায় রাখতে হবে।
তুমি অনলাইনে সমানুভূতিশীলতা দেখানোর অনুশীলন কিভাবে করবে ?
* অন্যের বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা কিংবা তাকে মেসেজ পাঠানো আগে চিন্তা করো । সামনা-সামনি দেখা হলে কি তুমি এভাবেই কথা বলতে পারতে?
তোমার কেমন লাগতো কেউ যদি তোমার সম্পর্কে একইভাবে বলতো?
* অনলাইনে ছবি বা ভিডিও শেয়ার করার আগে চিন্তা করো। এটা কাউকে মর্মাহত, রাগান্বিত, বিব্রত বা আক্রমণ করছে না তো? এটা কি যথাযোগ্য? এটি কতজন মানুষ দেখবে ও শেয়ার করবে সে ব্যাপারে তুমি কি অবগত?
* ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করো ।
তুমি যা বলেছো তা অন্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে এবং তারা কি মনে করতে পারে? এমনকি তা তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
* কেউ সাইবারবুলিং-এর শিকার হলে সেখানে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকো। নির্ভরযোগ্য ও প্রাপ্তবয়স্ক কাউকে বিষয়টি বলো এবং যে সাইবারবুলিং করছে তার সম্পর্কে রিপোর্ট করো, তার সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করবে না।
* কেউ যদি অনলাইন থেকে তার কোনো ছবি সরিয়ে ফেলতে বলে তবে তা সরিয়ে ফেলো।
* নিজের ব্যাপারেও নমনীয় থাকো সামাজিক মাধ্যমে প্রদর্শিত একজন মানুষের দৈনন্দিন জীবন কতটা উপভোগ্য বা তার বর্তমান অবস্থা কতখানি ভালো, তা সবার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নাও হতে পারে।
* স্ক্রল করার সময় যদি এমন কিছু দেখে মর্মাহত হয়ে থাকো তবে তৎক্ষণাত স্ক্রলিং বন্ধ করে একটি বিরতি নাও।
* সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে একজন মানুষ কিভাবে নিজেকে প্রদর্শন করতে চায় তা নিয়ে ভাবো, আরো চিন্তা করো সেভাবে প্রদর্শন করতে সে মানুষটি তার ছবি বা ভিডিও নিজের মতো করে সম্পাদনা করতে এবং বদলাতে পারে।
ডিজিটাল রেজিলিয়েন্স (ডিজিটাল মাধ্যমে সহনশীলতা):
ইউকে (UK) কাউন্সিল ফর চাইল্ড ইন্টারনেট সেফটি (ইউকেসিসিআইএস) রেজিলিয়েন্স ওয়ার্কিং গ্রূপের সংজ্ঞা অনুযায়ী ডিজিটাল মাধ্যমে সহনশীলতা হচ্ছে 'ডিজিটাল রেসিলিয়েন্স' ।
এর মানে হলো- কখন তুমি অনলাইনে অনিরাপদ আছো এটা বোঝার ক্ষমতা, অনলাইনে কোনো বিপদ বা ভুল হলে কী করতে হবে তা জানা, অনলাইনে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া এবং নেতিবাচক কোনো অবস্থা থেকে উত্তরণের সক্ষমতা থাকা।’
কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে সহনশীল হলে যা করতে পারবে:
১.বুঝতে পারবে কখন তারা অনলাইন ঝুঁকিতে রয়েছে ,
২.সাহায্য চাইতে হলে কী করতে হবে সে সম্পর্কে জানবে
৩.অভিজ্ঞতা থেকে শিখতে পারবে ।
৪.নেতিবাচক অবস্থা থেকে নিজেদের উত্তরণ ঘটাতে পারবে ।
নেটিকেট :
ইন্টারনেট ও এটিকেট (ভদ্রতা) এ শব্দ দু’টোকে এক করলে নেটিকেট শব্দটি হয়। এর মানে হচ্ছে, অনলাইনে তোমার আচরণ কেমন হওয়া উচিৎ। নেটিকেটের নিয়ম অনুসরণ করার মাধ্যমে তুমি ডিজিটাল বিশ্বকে তোমার ও অন্যদের কাছে ইতিবাচক করে তুলে ধরতে পারবে।
তুমি লক্ষ্য করে থাকতে পারো , নেটিকেট শব্দটি অনলাইনে সহমর্মী হওয়ার মতো। অনলাইনে অন্যদের প্রতি সহমর্মী ও শোভন হওয়া নেটিকেটের নিয়ম অনুসরণের বড় একটি অংশ।
অনলাইনে কারো সাথে চ্যাট করার সময় তার অনুভূতি জানা কঠিন, আর এভাবেই কারো সাথে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয়। কখনও কি এমন হয়েছে যে, তুমি তোমার কোনো বন্ধুকে গুরুত্বপূর্ণ মেসেজ পাঠিয়েছেন আর সে তা মজা হিসেবে নিলো?
এমন অনেক মানুষ আছে যারা ইন্টারনেটের ভদ্রতা সম্পর্কে অজ্ঞাত। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘৃণ্যমূলক মেসেজ পাঠানো কিংবা নিপিড়নমূলক মন্তব্য করার মাধ্যমে বিদ্রুপ করা এবং ভুয়া সংবাদ ছড়ানো নেতিবাচক মনোভাবেরই বহিঃপ্রকাশ। এধরনের মানুষের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ না করাই শ্রেয়। নির্ভরযোগ্য কাউকে উল্লেখিত ঘটনা বর্ণনা করো এবং এধরনের মানুষকে রিপোর্ট ও ব্লক করার ব্যাপারে সহায়তা নাও ।
অনলাইনে নিরাপদ থাকা ও এটি ব্যবহারের অভিজ্ঞতা উপভোগ করার কিছু সহজ নিয়ম দেয়া হলো:
তোমার বন্ধু ও অন্য মানুষের ছবি ও ভিডিও শেয়ার করার আগে সঠিকভাবে নিশ্চিৎ হও। শেয়ার করা কন্টেন্ট নিয়ে তারা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে পারেন বা তা সবার সঙ্গে শেয়ার করতে চাইতে নাও পারেন। অন্যের ব্যক্তিগত কিছু শেয়ার করার আগে তার অনুমতি নিতে হবে।
কোনো কিছু পোস্ট করার আগে চিন্তা করো। এটি কাউকে হেয়, বিব্রত বা মর্মাহত করবে কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিৎ হোন। কোনো তারকাকে সামাজিক মাধমে বাজে মন্তব্য করা এর অন্তর্ভূক্ত। অপরিচিত কারো সঙ্গে বিদ্রুপ করাও ইতিবাচক নয়।
কোনো তথ্য শেয়ার করার আগে তার সত্যতা যাচাই করে নাও, ভুলবশত অসত্য কোনো তথ্য শেয়ার করলে তা বিভ্রান্তি ছড়াবে।
ইমেইল, মেসেজ কিংবা মন্তব্য কিভাবে করছো সে ব্যাপারে খেয়াল রাখো। উদাহরণস্বরূপ, তোমার শিক্ষককে বড় অক্ষরে কিছু লিখলে তা অভদ্র ও আক্রমণাত্মক মনোভাব প্রকাশ করে, যদিও তুমি তা বোঝাতে চাওনি।

