Visit our YouTube channel Visit Now Watch Now!

ভবিষ্যৎ শক্তির নিখাঁদ উৎসের হাতছানি


 মানব মনে ভবিষ্যৎ শক্তির উৎস হিসেবে যা শক্ত আসন অধিকার করে নিয়েছে তা হলো অ্যান্টিম্যাটার বা প্রতিপদার্থ। 

মানুষ একে নিয়ে এমনভাবে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে যে অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে বানানো হয়েছে অতিরঞ্জিত বেশ কিছু মুভি ও ডন ব্রাউনের "অ্যাঞ্জেলস এন্ড ডেমনস" উপন্যাসের মতো অসংখ্য কল্পকাহিনী। 


আপনি যদি আয়নায় দাঁড়ান তাহলে আপনি যদি ম্যাটার হন তাহলে আপনার প্রতিচ্ছবিটি হবে আপনার বিপরীত সত্তা অ্যান্টিম্যাটার।

প্রতিপদার্থের একটি পরমাণুর চার্য ও স্পিন যা হয় পদার্থের ক্ষেত্রে তার ঠিক বিপরীত। তাছাড়া ভরসহ সকল বৈশিষ্ট্য একই থাকে। প্রতিপরমাণুর কেন্দ্রে থাকে প্রতিপ্রোটন ও প্রতিনিউট্রন। আর একে ঘিরে ঘুরতে থাকে প্রতিইলেকট্রন বা পজিট্রন। যদি কোনোভাবে পদার্থ ও প্রতিপদার্থের দেখা হয় তাহলে তারা উভয়েই পরস্পরকে গামা রশ্মিতে বিসর্জনের মাধ্যমে রেখে যাবে শক্তি। আর এই শক্তি কাজে লাগিয়েই মানবসভ্যতাকে আরও কয়েক প্রজন্ম এগিয়ে নেওয়ার প্রহেলিকায় দিন গুনছে কিছু উচ্চাভিলাষী মানুষেরা।


আপনার কি মনে আছে হিরোশিমা ও নাগাসাকি ট্রাজেডির কথা?

ওখানে যে পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করা হয়েছে মাত্র আধা গ্রাম প্রতিপদার্থ ব্যবহার করে এমন ধ্বংসযজ্ঞ চালানো খুবই সম্ভব। 

পারমাণবিক বোমা হতে ১০০০ ভাগের এক ভাগ শক্তি বেরিয়ে আসে মাত্র ,আর পদার্থ ও প্রতিপদার্থ পরস্পর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হলে ১০০ ভাগ পর্যন্ত শক্তি বেরিয়ে আসে। 

একটি অ্যান্টিম্যাটার মিসাইল পারমাণবিক বোমার চাইতে ১০০০ গুণ ও হাইড্রোজেন বোমার চাইতে ১০০ গুণ বেশি শক্তিশালী তা আপনার হাতের মুঠোয় এঁটে যাবে।

অনেক মানুষ ভাবছেন অনবায়নযোগ্য জ্বালানির উৎস শেষ হয়ে গেলে অ্যান্টিম্যাটারকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এ প্রচেষ্টায় বিজ্ঞানীরা কতটূকু হাল ধরতে পেরেছেন তা দেখা যাক। আর অ্যান্টিম্যাটারের মূল্যই বা কতটা? 


১ গ্রাম প্রতিপ্রোটন বানাতে ৬*১০^২৩ টি প্রতিপ্রোটন লাগে। আর ১ গ্রাম পজিট্রন বানাতে ১০^২৬ টি পজিট্রন লাগে। ২০০৭ সালের জুনে, ফার্মিল্যাব ১০^১৪ টি প্রতিপ্রোটন উৎপাদন করে যা রেকর্ডসংখ্যক।

১০^১৫ টির মতো প্রতিপ্রোটন সমান ১ গ্রামের ১ বিলিয়ন ভাগের ১.৫ ভাগ। অর্থাৎ ১ ন্যানোগ্রামের কিছুটা বেশি। এসব প্রতি প্রোটন এক করে, এদের যদি ১.৫ ন্যানোগ্রাম প্রতি পদার্থের সংস্পর্শে এনে ধ্বংস করে দেওয়া যায় তাহলে সর্বমোট ২৭০ জুলের মতো শক্তি পাওয়া যাবে। 

এ শক্তি দিয়ে একটি বাল্বকে খুব বেশি হলে ৫ সেকেন্ডের মতো জ্বালানো যাবে। 

CERN -এ এডি গড়ে ৪০ হাজারের মতো প্রতিপ্রোটন তৈরি করে। এ উৎপাদনের হাড় চাইলে ১০ গুণ ধীরে ধীরে ১০০ গুন পর্যন্ত বাড়ানো সম্ভব। তারপরেও ১৯৫৫ সালে CERN -এ LEAR তৈরির পর থেকে যে পরিমাণ প্রতিপ্রোটন তৈরি করা হয়েছে তা এক গ্রামের এক লক্ষ ভাগের একভাগ। আর এছাড়াও পুরো পৃথিবীর ইতিহাসে যে পরিমাণ প্রতি পদার্থ তৈরি করা হয়েছে তার পরিমাণ হবে মাত্র ৩ ন্যানোগ্রাম। 


ইতিহাসে যত প্রতিপোটন বানানো হয়েছে সব এক করে সমপরিমাণ প্রোটনের সঙ্গে স্পর্শ করলেও বাল্বটা বড়জোর কয়েক মিনিট জ্বলবে। সত্যি বলতে কি, যারা অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে আকাশ কুসুম কল্পনা করেন তাদের আশায় গুঁড়েবালি। 

কয়েক সপ্তাহ কিংবা কয়েক মাসের মধ্যেই একটি এলাকায় যে পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহ লাগে তার সমপরিমাণ সরবরাহ দিতে যে পরিমাণ অ্যান্টি ম্যাটার লাগবে তা এখনো তৈরি করার মত যন্ত্র আবিষ্কৃতই হয়নি। তার সাথে রয়েছে অ্যান্টিম্যাটার সংরক্ষণের মতো ঝামেলা। 

একটি কথা বললে মোটেও অত্যুক্তি করা হবে না যে এক গ্রাম বানানো দূরের কথা, ছোট একটা খেলনা বেলুন ভরার মতো প্রতি হাইড্রোজেন বানাতে যে সময় লাগবে তা আমাদের মহাবিশ্বের বয়সের চেয়েও বেশি!

হয়তোবা মহাবিশ্বের কোন একখানে লুকিয়ে থাকা আমাদের চাইতে কয়েক হাজার বছর এগিয়ে থাকা বুদ্ধিমান প্রাণের সভ্যতা চাইলে এক বছরের মধ্যেই এক গ্রাম অ্যান্টিম্যাটার তৈরি করে ফেলতে পারবে। 


সুতরাং এখন থেকেই যারা ভবিষ্যতের শক্তির উৎস হিসেবে অ্যান্টিম্যাটার নিয়ে নানা রকম কল্পনার ফানুস ওড়াচ্ছেন সেখান থেকে ইতি টানা উচিত।  

কল্পিত স্বর্গে বাস করার চাইতে বাস্তবতা আপনাদেরকে মেনে নিতে হবে। ভবিষ্যৎ বলতে আপনি যা বোঝাতে চাচ্ছেন তা হতে পারে আমাদের থেকে কয়েক হাজার বছর এগিয়ে থাকা বুদ্ধিমান সভ্যতার অতীত। 


সুতরাং আগামী কয়েক শতাব্দীর মধ্যেও অ্যান্টিম্যাটারকে কাজে লাগিয়ে বৃহৎ শক্তির উৎস খুঁজে পাওয়াটা আদৌ সম্ভব নয় !!!


শাহরিয়ার আহমেদ

 সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ, সৈয়দপুর নীলফামারী, বাংলাদেশ।



About the Author

Mystery Knowledge and Reality...!!!

৩টি মন্তব্য

  1. Very Nice
  2. Great 😃👍👍.... carry on...
  3. 👍👍👍♾️
Information is wealth... MKR Web
Site is Blocked
Sorry! This site is not available in your country.