সূচনা :
মহাকর্ষ বলের তত্ত্বের উন্নতির যুগকে আমরা দুইটা ভাগে ভাগ করতে পারি। আইনস্টাইন পূর্ববর্তী যুগ এবং আইনস্টাইন পরবর্তী যুগ।
রিচার্ড ফাইনম্যান ক্যালটেকে শিক্ষার্থীদের লেকচার দেওয়ার সময় একটি ক্লাস্টারের ছবি দেখিয়েছিলেন।
![]() |
ক্লাস্টার |
(ক্লাস্টার হচ্ছে গ্যালাক্সিদের ঝাঁক। ক্লাস্টারের যত কেন্দ্রের দিকে যাওয়া যায় ততো গ্যালাক্সি সমূহ বেশি থাকে। কারণ কেন্দ্রের দিকে মহাকর্ষীয় টান বেশি থাকে) ছবিটি দেখিয়ে রিচার্ড ফাইনম্যান বলেছেন, "যারা এই ছবির মধ্যে মহাকর্ষ বল দেখতে পাচ্ছেন না তাদের আসলে মন বলতে কিছুই নেই।" কথাটির মধ্যে যৌক্তিকতা রয়েছে বলতে হয়।
আইনস্টাইন পূর্ববর্তী যুগ নিয়ে আমি পার্ট-১ এ আলোচনা করেছিলাম। এই অংশে আমি আইনস্টাইনের যুগ এবং তার পরবর্তী মহাকর্ষীয় বল তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করব।
আইনস্টাইন পরবর্তী যুগ:
বিশেষ আপেক্ষিকতার সাফল্যে ভাসতে ভাসতে আইনস্টাইন নিজেকে একদিন একটি সরল প্রশ্ন করলেন," সূর্য যদি হঠাৎ উধাও হয়ে যায় তাহলে আমরা কতক্ষণ পর তা জানতে পারবো?"
নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব অনুযায়ী সূর্য উধাও হয়ে গেলে আমরা তাৎক্ষণিকভাবে তা জানতে পারবো। কিন্তু আইনস্টাইন বললেন যে আলোর চেয়ে দ্রুতগতিতে যেহেতু তথ্য চলতে পারে না তাই এ তথ্যটিও আলোর চেয়ে দ্রুত গতিতে চলতে পারবে না। তাই তিনি একটি কাল্পনিক তরঙ্গ ধরে নিয়েছিলেন যাকে বলা হয় মহাকর্ষীয় তরঙ্গ(Gravitational Waves)। অর্থাৎ সূর্য যদি হঠাৎ উধাও হয়ে যায় তাহলে সে তথ্য মহাকর্ষীয় তরঙ্গ সাথে করে নিয়ে আসবে আর সেটি চলে আলোর বেগে।
সুতরাং এটি একটি বিদ্যুৎ চুম্বকীয় তরঙ্গ।
১৯১৬ সালে আইনস্টাইনের ভবিষ্যদ্বাণীর প্রায় ১০০ বছর পর ২০১৬ সালে ক্যালটেকের বিজ্ঞানীরা LIGO ডিটেক্টরের সাহায্যে এই মহাকর্ষীয় তরঙ্গ ধরতে সক্ষম হন যার তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কয়েক কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এ পর্যন্ত মোট চারবার এই তরঙ্গ শনাক্ত করা গিয়েছে।
নিউটনের তত্ত্বে মূল সমস্যাটি ছিল যে এখানে কোন "সময় নামক" রাশি ছিল না। এই সময় নামক রাশিটি জুড়ে দিয়ে আইনস্টাইন সে অসাধ্য সাধন করতে পেরেছিলেন।
এর কয়েক সপ্তাহ পরে হেনরি পয়েনকেয়ার নামক একজন বিখ্যাত ফরাসি গণিতবিদ আইনস্টাইনের মতো করে সমাধানটি দিয়েছিলেন কিন্তু আইনস্টাইনের সমাধানটি পদার্থবিজ্ঞানের সঙ্গে বেশি সংঙ্গতিপূর্ণ ছিল।
আইনস্টাইন তখন ভাবলেন যে কেমন হয় যদি আমি মহাকর্ষ বল কে আপেক্ষিকতার তত্ত্বের সাথে জুড়ে দিই? এর ফলে জন্ম হলো বিশেষ আপেক্ষিকতার একটি বিবর্ধিত শাখার। এর নাম "সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব" (Theory of General Relativity)।
এই তত্ত্ব অনুযায়ী একজন যদি একটি স্পেসশিপে করে পৃথিবীর চারদিকে ঘোরেন তাহলে সে ব্যক্তি কোন মহাকর্ষীয় বল অনুভব করবেন না কারণ তারা দুজনই পৃথিবীর দিকে একই হারে পতিত হচ্ছেন অর্থাৎ এখানে স্পেসশিপের সাপেক্ষে সেই ব্যক্তির একটি আপেক্ষিকতা কাজ করছে।
এ তত্ত্বের ফলে আইনস্টাইন মাইকেল ফ্যারাডের ক্ষেত্র তত্ত্বে অনুপ্রাণিত হয়ে সময় এবং কালকে একই ক্ষেত্রের মধ্যে আবদ্ধ করলেন এর নাম হয়ে গেল "স্পেস-টাইম" এবং সময়কে তিনি মহাবিশ্বের চতুর্থ মাত্রা হিসেবে স্বীকৃতি দিলেন।
আইনস্টাইনের মতে "স্পেস-টাইম" হলো একটি চাদরের মত যেটি চারটি খুঁটি দিয়ে টানটান করে বাধা আছে। যখন কোন বৃহৎ আকারের বস্তু এর উপরে রাখা হয় তখন এটি চাদরে একটি ঢালু পথের সৃষ্টি করে অর্থাৎ একটি স্পেস-টাইম বা স্থান কালের বক্রতার সৃষ্টি করে। এ বক্রতার উপরে অন্য একটি ক্ষুদ্র বস্তু যদি আসে তাহলে সেটি সেই বৃহৎ বস্তুকে কেন্দ্র করে ঘুরবে। এভাবে আইনস্টাইন মতবাদ দিলেন যে মহাকর্ষ কোনো বল নয় এটি শুধুমাত্র স্থান কালের বক্রতার খেলা।
এরপর বিজ্ঞানীরা যখন মহাকর্ষ বলে "কোয়ান্টাম মেকানিক্স" প্রয়োগ করতে চাইলেন তখন মহাকর্ষ একটা বল হিসেবে আবির্ভূত হলো এবং তার সুদূরপ্রসারী ফলাফল দেখা দিল। তত্ত্বের গাণিতিক বৈশিষ্ট্য বজায় রাখার জন্য বিজ্ঞানীরা একটি কল্পিত কণা ধরে নিলেন যার নাম হচ্ছে "গ্রাভিটন"(Graviton)। এই কণার মাধ্যমে মহাকর্ষ বল দুইটি বস্তুর মধ্যে আদান প্রদান হয় অর্থাৎ এটি একটি বোসন শ্রেণীর কণা।
মহাকর্ষ তত্ত্বে "কোয়ান্টাম মেকানিক্স"- এর প্রয়োগ এবং গ্রাভিটন কণা নিয়ে আমি ৩য় পার্টে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ।

~2.jpeg)